ধর্ষণ কি সমাজের আর্ট হতে চলেছে নাকি দূর্বল বিচার ব্যবস্থা দায়ী!

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি পরিসংখ্যানে উঠে
এসেছে যে, গত ৮ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯০০ এর অধিক এবং গত বছর সারা দেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার ১ হাজার ৪১৩ নারী ও শিশু। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিল ৭৩২।

বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণের মামলা ছিলো ৭২৭টি এবং নারী ধর্ষণের মামলা ছিলো ৩ হাজার ৯০০টি। ২০১৯ সালে এসে শিশু ধর্ষণের মামলা ছিলো ৮১৫টি এবং নারী ধর্ষণের মামলা ছিলো ৫ হাজার ৪০০টি৷ স্পষ্টত এই বছর তিনগুন হারে বাড়বে!

এই জাতির এমন লজ্জাকর অধঃপতনের কারণ কি! নিঃসন্দেহে বর্তমান দুর্বল বিচার ব্যবস্থা এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা এর জন্য দায়ী, প্রচলিত ধর্ষণের দণ্ড ধর্ষণ ঠেকাতে অক্ষম এটি আর প্রমাণের বাকি নেই৷ বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা আর যথাযথ দণ্ড না হওয়ার কারণে যদি ধর্ষণ এতই উল্লাসের আর রীতিমতো ট্রেন্ডে পরিণত হয়, তাহলে যথাযথ দণ্ডের দৃষ্টান্ত না দেখানো দেশের বিচার ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে দুর্বল এবং অক্ষম৷ সুতরাং কোনোভাবেই এর দায় বিচার বিভাগ এড়াতে পারেনা!

সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণ কিংবা অসুস্থ স্বামীর জন্য রক্ত আনতে গিয়ে মিরপুরে ধর্ষণের শিকার স্ত্রী বা রাজশাহীতে গির্জায় তিন দিন আটকে রেখে ফাদার কতৃক স্কুলছাত্রী ধর্ষণ আবার ওজু করতে বের হয়ে ৭২ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষণ ইত্যাদি ইত্যাদি, সোশ্যাল মিডিয়া এবং জাতীয় পত্রিকাগুলো এখন ধর্ষণের শিরোনামে ভরপুর৷ কতই নিকৃষ্ট আমরা! কতই নিকৃষ্ট আমাদের মানসিকতা!

দিনের পর দিন ধর্ষণ ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধির কারণ কি! অনেক কারণই উল্লেখযোগ্য, নারীর প্রতি অমর্যাদা কিংবা নারীর অসচেতনতা আবার নারীর পোশাক এবং আমাদের ঘৃণ্য মানসিকতা৷ এই উল্লিখিত চারটি কারণের একটিকে আমরা বিশেষভাবে দোষারোপ করতে পারি না৷ বর্তমান সমাজ ধর্ষণের কারণ হিসেবে নারীর পোশাককেই বেশী দায়ী মনে করে, তবে এই একটি কারণকে যেই সমাজ ধর্ষণের কারণ মনে করে আমি বলবো সেই সমাজ ত্যাজ্য৷ কারণ নারীর প্রতি পুরুষের মর্যাদা এবং অধিকাংশ পুরুষ নারীবান্ধব নয় বলেই পুরুষরা আজ এতো বেপরোয়া আবার নারীর অসচেতনতাও ধর্ষণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে! এইতো গত কয়েকদিন আগের শিরোনাম, টিকটিক অভিনয় করতে কয়েকজন নারী ঢাকায় একজন পুরুষের বাসায় থেকেছে সেখানে তারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ আধুনিক নারীর আধুনিক পোশাক যখন গভীর রাতে কিংবা খোলা মাঠে বা লোকালয়ে পুরুষের চোখে পড়ে, কিছুটা হলেও তার দৃষ্টিভঙ্গির অবৈধ পরিবর্তন ঘটে এবং জঘন্য কাজে অনুপ্রেরিত হয়৷ তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের ঘৃণ্য মানসিকতা, অন্যথায় ১/২ বছরের শিশু ধর্ষণ হয় কেমনে! আমাদের মানসিকতা এতই নিকৃষ্ট যে, শিশু বৃদ্ধেরও ধর্ষণ থেকে রেহাই নেই৷

এমন ঘৃণ্য একটা পরিস্থিতি নির্ণায়কের চক্ষুগোচর হচ্ছেনা কেনো! ধর্ষণের শাস্তি দিবালোকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া এখন সময়ের দাবি, অন্যথায় এই জাতির নিকৃষ্ট এই অধঃপতন কোথায় গিয়ে ঠেকবে ভাবাও অসম্ভব! আর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দরকার আমাদের মানসিকতায়, পরিবর্তন দরকার পোশাক ব্যবস্থায়ও৷ পুরুষের যেমন নারীর প্রতি মর্যাদাবান ও নারীবান্ধব হতে হবে, তেমনি নারীর সচেতনতাও ধর্ষণ ঠেকাতে বিরাট ভূমিকা রাখবে৷

মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ ✍

ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়